বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ফেরদৌসী কাদরী পাচ্ছেন র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক: কলেরা আর টাইফয়েডের টিকা তৈরি করে হাজারো মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. ফেরদৌসী কাদরী পাচ্ছেন চলতি বছরের র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার।র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ট্রাস্টি গতকাল মঙ্গলবার ২০২১ সালের পুরস্কারের জন্য ফেরদৌসী কাদরীসহ চারজন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণা করে।সম্মানজনক এ পুরস্কারকে বলা হয় ‘এশিয়ার নোবেল’। ফেরদৌসী কাদরীর সঙ্গে পাকিস্তানে ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে কাজ করা মুহাম্মদ আমজাদ সাদিক, উদ্বাস্তুদের সহায়তায় কাজ করা মানবাধিকার কর্মী স্টিভেন মানসি, ফিলিপিন্সের মৎস্যজীবী রবার্তো ব্যালস ও ইন্দোনেশিয়ার প্রোডাকশন হাউস ওয়াচডক এবার এ পুরস্কার পাচ্ছেন।ফাউন্ডেশনের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কলেরা ও টাইফয়েডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে টিকা আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন ড. ফেরদৌসী কাদরী। এই পুরস্কারের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব ট্রাস্টি বিজ্ঞান পেশায় তার নিষ্ঠার স্বীকৃতি দিচ্ছে।’৭০ বছর বয়সী ড. কাদরী জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে। চিকিৎসা গবেষণায় পারদর্শী হয়ে উঠতে তিনি যুক্তরাজ্যে যান জৈব রসায়ন নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করতে।লিভারপুল ইউনিভার্সিটি থেকে ডক্টরেট করে দেশে ফিরে প্রথমে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন ফেরদৌসী কাদরী। ১৯৮৮ সালে তিনি আইসিডিডিআর,বিতে যোগ দেন এবং সংক্রামক রোগ, রোগ প্রতিরোধ বিদ্যা, টিকার উন্নয়ন ও পরীক্ষায় মনোনিবেশ করেন। এখন তিনি আইসিডিডিআর,বিতে ইমিউনোলজি বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড ফাউন্ডেশন বলছে, বিজ্ঞান গবেষণায় মানবসম্পদ ও স্থাপনাগত অবকাঠামো নির্মাণে ড. কাদরীর ভাবনা বিশেষ করে নারী বিজ্ঞানীসহ বাংলাদেশের আগামী দিনের বিজ্ঞানীদের উপকৃত করবে।২০১৪ সালে তিনি জৈব চিকিৎসাবিষয়ক গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও পরীক্ষার কাজে ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপিং সায়েন্স অ্যান্ড হেলথ ইনিশিয়েটিভস (ইদেশি) প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি এখন স্থানীয় এবং বিদেশ থেকে আসা বিজ্ঞানীদের জন্য বৈজ্ঞানিক ও গবেষণাভিত্তিক কার্যক্রমের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।এছাড়া টিকার উন্নয়নে ফেরদৌসী কাদরীর নিরলস অবদান, উন্নত জৈব প্রযুক্তির চিকিৎসাবিদ্যা ও জটিল গবেষণা লাখো মানুষের অমূল্য জীবন রক্ষায় ‘অসামান্য ভূমিকা’ রাখছে বলে মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে।বাংলাদেশসহ এশিয়া এবং আফ্রিকার দেশগুলোয় নিরাপদ পানি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসার সুযোগ যেখানে সীমিত, সেখানে কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফেরদৌসী কাদরীর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।মুখে খাওয়ার উপযোগী কলেরার টিকা (ওসিভি) এবং বয়স্ক এবং শিশুসহ ৯ মাস বয়সী নবজাতকের জন্য টাইফয়েডের (ভিটিসিভি) টিকার উন্নয়নে তিনি মূল ভূমিকা রাখেন বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।ফিলিপিন্সের সপ্তম প্রেসিডেন্ট র্যামন ম্যাগসাইসাইয়ের স্মরণে ১৯৫৮ সাল থেকে এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এশিয়ার দেশগুলোয় নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছর সম্মানজনক এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।আগামী ২৮ নভেম্বর ফিলিপিন্সের রাজধানী ম্যানিলায় র্যামন ম্যাগসাইসাই সেন্টারে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বছরের মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দেয়া হবে। তারা সবাই একটি সনদ, একটি পদক ও নগদ অর্থ পাবেন।উন্নয়নশীল দেশগুলোয় শিশুদের সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে টিকাদান কর্মসূচিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এর আগে ২০২০ সালে ল’রিয়েল-ইউনেসকো ফর ওমেন ইন সায়েন্স অ্যাওয়ার্ড পেয়েছিলেন ফেরদৌসী কাদরী।
