নিজস্ব প্রতিবেদক: মহামারি কভিড-১৯-আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ায় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালসহ ২২ প্রতিষ্ঠানের দুই হাজার ৬৭৯ নার্সকে দেয়া হয়েছে দুই মাসের বিশেষ সম্মানী।
স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবালয় অংশে সম্মানী খাতে বরাদ্দ ১৫০ কোটি টাকার অব্যয়িত অর্থ থেকে ২২ প্রতিষ্ঠানকে ১১ কোটি পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৩৫০ টাকা দেয়া হয়েছে।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কভিড-১৯-আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের জন্য আরও আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার।
গত বছর ২৯ এপ্রিল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক, নার্সসহ স্বাস্থ্য খাতে যারা নিয়োজিত আছেন, তাদের পুরস্কৃত করা হবে। কিন্তু যারা পালিয়ে আছেন, তারা এই প্রণোদনা পাবেন না।
সে ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ প্রণোদনা হিসেবে অতিরিক্ত দুই মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ অর্থ এককালীন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
যেসব প্রতিষ্ঠানের নার্সরা বিশেষ সম্মানী পেয়েছেন সেগুলো হলোÑকুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ৪৮৪ নার্সের জন্য এক কোটি ৯৪ লাখ ৮২ হাজার ৬৬০ টাকা, মুন্সীগঞ্জে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের ২২ নার্সের জন্য আট লাখ ২০ হাজার ৬৮০ টাকা। এছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে জেনারেল হাসপাতাল, রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতাল, উত্তরার কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, মুগদার ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল এবং বসুন্ধরার অস্থায়ী কভিড-১৯ আইসোলেশন কেন্দ্রের ১৫ নার্স রয়েছেন এ তালিকায়। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের ৩৩ নার্স, নারায়ণগঞ্জের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল, মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং চাঁদপুরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নার্সদের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। এর সঙ্গে মিরপুরের মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান লালকুঠির ৮২ নার্সের জন্য ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৭৮০ টাকা দেয়া হয়।
এছাড়া বগুড়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল, নওগাঁ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, বরিশাল জেনারেল হাসপাতাল, বাগেরহাট সদর হাসপাতাল, খুলনার ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতাল (ডায়াবেটিক হাসপাতাল), চট্টগ্রামের হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, হবিগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমেদ হাসপাতাল, মাদারীপুরের কভিড হাসপাতাল ও মাদারীপুর জেলা সদর হাসপাতালের নার্সদের জন্য টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সম্মানীপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে যেসব পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবেÑস্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর নির্দিষ্ট ফরমে প্রাপ্ত আবেদন যাচাই-বাছাইপূর্বক সম্মানীর জন্য উপযুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর নামের তালিকা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে পাঠাবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ তালিকা যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে অর্থ বিভাগের সম্মতিক্রমে সম্মানী দেয়ার জন্য সরকারি আদেশ জারি করবে।
এছাড়া সম্মানী বাবদ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অনুকূলে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ সম্মানী বর্তমানে প্রচলিত অন্য যেকোনো প্রজ্ঞাপন বা আদেশে বর্ণিত সম্মানীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর্থিক সহায়তা বা অনুদানের অতিরিক্ত হিসেবে প্রদেয় হবে।
এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এককালীন বিশেষ এ প্রণোদনা পেতে আবেদনে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নাম এবং আইডি নম্বর উল্লেখ করতে হবে। পদবি, অফিস ও বেতন গ্রেড, মূল বেতন এবং এককালীন বিশেষ সম্মানীর পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় কোন হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানে তারা নিয়োজিত ছিলেন, তার নাম ও ঠিকানাও লিখতে হবে।
এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবায় সরাসরি নিয়োজিত ছিলেন বলে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রত্যয়ন আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি মূল বেতনের পক্ষে চিফ অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড ফিন্যান্স অফিসার বা ডিএও বা ইউএও বা ডিসিএও’র প্রত্যয়ন যুক্ত করতে হবে।
