ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি, বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) নির্মাণাধীন দেশের বৃহত্তম করোনা আইসোলেশন সেন্টারের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ। কনভেনশন হল ও ট্রেড সেন্টার মিলে বসেছে ১ হাজার ৭০০ বেড। কিছু বেড অ্যাসেম্বল (বিভিন্ন অংশ যুক্ত করা) করে বসানো এবং কয়েকদিন ঝড়-বৃষ্টির কারণে বাধাগ্রস্ত হওয়া টয়লেট নির্মাণের টুকটাক কাজ ছাড়া তেমন কিছুই বাকি নেই।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চাইলেই এখন বুঝে নিয়ে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করতে পারে। অধিদপ্তর থেকে উদ্বোধনের তারিখ দিলে বাকি কাজ শেষ করতে সর্বোচ্চ দরকার হবে আধাবেলা। কোভিড-১৯ বিপর্যয় শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং সরকারের যতদিন ব্যবহারের প্রয়োজন শেষ না হবে ততদিন আইসিসিবিকে ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে আইসিসিবিকে পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে রূপ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে গত ১২ এপ্রিল কাজ শুরু করে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
আজ সোমবার সকালে আইসিসিবিতে নির্মাণাধীন হাসপাতাল প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, ট্রেড সেন্টারের অধিকাংশ জায়গায় বেড ও আসবাব বসানো হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের কক্ষ, পর্যবেক্ষণ ডেস্ক, হেল্প ডেস্ক-সবকিছুই সাজানো হয়ে গেছে। অল্প কিছু জায়গা ফাঁকা রয়েছে। তাঁবুর বাইরে বেড অ্যাসেম্বল করে সেগুলো এনে পূরণ করা হচ্ছে সেই ফাঁকা জায়গা।
সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা জানালেন, আড়াইশর মতো বেড বাকি আছে অ্যাসেম্বল করতে। এগুলো হলেই বেডের কাজ শেষ। এ ছাড়া তাঁবুর বাইরে কয়েকটি টয়লেট নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তারা আরও জানান, বৃষ্টি না আসলে আজকের মধ্যেই এগুলোর কাজ শেষ হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুদুল আলম বলেন, ‘দ্রুত হাসপাতাল নির্মাণ করতে আমরা রাত-দিন কাজ করেছি। তিন দিন বৃষ্টি হওয়ায় খোলা আকাশের নিচের কাজগুলো পিছিয়ে গেছে। তবে বড় কোনো কাজ বাকি নেই। এই মাসের মধ্যে হাসপাতাল চালুর যে লক্ষ্য ছিল, আমরা এখনো সেখানেই আছি।’
আইসিসিবির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা এম এম জসীম উদ্দিন বলেন, ‘হাসপাতালের কাজ বলা যায় শেষ। আমরা বসুন্ধরা থেকে চাইছি যত দ্রুত সম্ভব এখানে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা যায়। কারণ, করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। এখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উদ্বোধনের তারিখ দিলে টুকটাক যেটুকু কাজ বাকি আছে তা শেষ করতে আধা বেলার বেশি লাগার কথা না।’
জসীম উদ্দিন আরও বলেন, ‘গতকাল আমরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম উদ্বোধনের তারিখের ব্যাপারে। তারা বলেছে, শিগগিরই জানাবে। মূলত, হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, সাপোর্টিং স্টাফ এগুলোর ব্যবস্থা করে উদ্বোধনের তারিখ দেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আমরা বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছি।’
সংশ্লিষ্টদের থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, হাসপাতালে মোট আইসোলেশন বেড হবে ২ হাজার ১৩টি। ট্রেড সেন্টারে ছয় ক্লাস্টারে ১ হাজার ৪৮৮টি বেড বসবে। এ ছাড়া তিনটি কনভেনশন হলে থাকবে আরও ৫২৫টি বেড। এর বাইরে ৪ নম্বর হলে ৭১ বেডের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রসঙ্গত, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে সরকারকে আইসিসিবিতে ৫ হাজার শয্যার একটি সমন্বিত অস্থায়ী হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্মতি দিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল পরিদর্শন করে হাসপাতাল স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। নানা হিসাব-নিকাশ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সেখানে ২ হাজার ১৩ শয্যার হাসপাতাল ও ৭১ শয্যার আইসিইউ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আইসিসিবির সুবিশাল চারটি কনভেনশন হল ও একটি এক্সপো ট্রেড সেন্টারে দেশের অন্যতম বৃহৎ এ হাসপাতালটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করছে সরকারের স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
