বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ তনয় শহীদ শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মদিনের স্মারক প্রকাশনা ‘হৃদয়মাঝে শেখ রাসেল’ গ্রন্থের প্রদর্শনী উদ্বোধন করলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি শুক্রবার বিকাল চারটায় বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম সংলগ্ন শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং ফেডারেশন প্রাঙ্গণে গ্রন্থটির প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদসহ কর্মকর্তাবৃন্দ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার জয়ীতা প্রকাশনীর স্মারক প্রকাশনা ‘হৃদয়মাঝে শেখ রাসেল’ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গ্রন্থটির উপদেষ্টা সম্পাদক যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সম্পাদক কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও প্রকাশক ইয়াসিন কবীর জয়কে সঙ্গে নিয়ে এর মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ তনয় শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মদিনে জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জয়ীতা প্রকাশনী প্রকাশ করেছে ‘হৃদয়মাঝে শেখ রাসেল’ সচিত্র গ্রন্থটি। উন্নতমানের ছাপায় ৯২ পৃষ্ঠার বইটিতে স্থান শেখ রাসেলকে নতুন করে চেনার সুযোগ রয়েছে। ঘাতক কাঁটার ঝরে যাওয়া ফুল শেখ রাসেলকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন পঁচাত্তরের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া তাঁর বড় দুই বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। রাসেলকে নিয়ে স্মৃতিমেদুর লেখায় মাতৃসম বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হৃদয় খুঁড়ে খুঁটিনাটি বহু প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের অনুরাগী। তাঁর নাম অনুসারে ছোট ছেলেটির নাম রেখেছিলেন রাসেল। কত আশা ছিল তাঁর ছেলে বড় হয়ে জগৎখ্যাত হয়ে উঠবে একদিন। কত সাধই না মানুষের অপূর্ণ থেকে যায়!
শেখ রাসেলকে নিয়ে আরও একটি নিবিড় মমতামাখা রচনা থাকছে ছোট বোন শেখ রেহানার। শেখ রেহানা সে সময় বড় বোনের সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন। রাসেলেরও জার্মানিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে সময় তার অসুখ করায় মা যেতে দিতে রাজি হননি। আহা, যদি সে সেদিন চলে যেত বোনদের সঙ্গে! শেখ রাসেলকে নিয়ে এই দুটি লেখা ছাড়াও থাকছে বিশিষ্ট কথাশিল্পী রশীদ হায়দারের একটি লেখা। এই তিনটি লেখাই সংকলিত। এই লেখাগুলোর মধ্য দিয়ে শিশু রাসেলের অল্প কয়েক দিনের জীবনের সঙ্গে পাঠকদের একটি পরিচয় ঘটার সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
এ ছাড়া এই গ্রন্থের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক শেখ রাসেলের দুর্লভ আলোকচিত্রগুলো। শেখ রাসেলের হাতে গোনা কয়েকটি ছবিই এত দিন দেখা গেছে বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বা সাময়িকীতে। তার একেবারে প্রথম দিকের ছবির অ্যালবামটি হারিয়ে গেছে, যে কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে প্রায় সব সময় ছায়ার মতো থেকেছে শিশুটি। বাবা রাষ্ট্র পরিচালনার অতি ব্যস্ততার ভেতরেও স্নেহের ছোট ছেলেটিকে সময় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সামাজিক ও পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান, রাষ্ট্রীয় অতিথিদের অভ্যর্থনা বা বিদেশ সফরকালে শেখ রাসেলও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। বিশেষ করে জাপান সফরে শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। জাপান সফরের অনেক দুর্লভ ছবি পাওয়া গেছে সম্প্রতি। এ ছাড়া আছে কিছু একান্ত পারিবারিক মুহূর্তের ছবি। এই ছবিগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে পিআইডির আর্কাইভস থেকে।
সব মিলিয়ে শতাধিক আলোকচিত্রের সন্নিবেশ হলো এই গ্রন্থে। ফলে পাঠকেরা শেখ রাসেলের পাশাপাশি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের এই দুর্লভ ছবিগুলো দেখার সুযোগ পাবেন। আমরা মনে করি, এই ছবিগুলো কেবল ছবি নয়, বাংলার ইতিহাসের উপাদান। ‘হৃদয়মাঝে শেখ রাসেল’-এর সম্পাদনা, প্রচ্ছদ ও অঙ্গপরিকল্পনা করেছেন শাহরিয়ার খান বর্ণ।
শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মদিন উপলক্ষে দিনভর রোলার স্কেটিংয়ের আয়োজন করেছে ফেডারেশন। শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সে খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি। এ সময় সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি, যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. আখতার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। এই পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আগে ‘হৃদয়মাঝে শেখ রাসেল’ গ্রন্থের প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়।
