আগামী ৮ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১১ শতাধিক নেতাকর্মীকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে বলে দাবি করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এছাড়া বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের ‘হদিস পাওয়া যাচ্ছে না’ অভিযোগ করে অবিলম্বে তার সন্ধান চেয়েছে তার বিএনপি।
মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির নয়া পল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই দাবি করেন। এসময় তিনি গ্রেফতারকৃতদের একটি হিসাব গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরেন।বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনে দলের সহ দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম ও সালাহউদ্দিন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি সোহেলের কোনো খোঁজ তারা সকাল থেকে পাচ্ছেন না।তিনি বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল সিলেট থেকে ফেরার পর কোথায় আছেন আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি। শাহবাগ থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইকবাল হাসানকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।তিনি কোথায় আছেন আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি। কেউ বলছেন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা পুলিশ তাদের দিক থেকে এখন পর্যন্ত কিছু জানাচ্ছে না কেনো? এটা আতঙ্কের ও উদ্বেগের।
গত ৩০ জানুয়ারি হাই কোর্ট মোড়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মামলারই আসামি হাবিব-উন নবী খান সোহেল। সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সিলেট সফরে সোহেলও তার সঙ্গে ছিলেন ।সিলেটে দুই আউলিয়ার মাজার জিয়ারত শেষে সোমবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঢাকায় ফেরেন খালেদা জিয়া। আর ভোরের দিকে গোয়েন্দা পুলিশ মালিবাগের একটি বাসা থেকে সোহেলকে আটক করে নিয়ে যায় বলে সকালে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন রিজভী।
পরে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসে তিনি অভিযোগ করেন, গত ২৮ জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির ১১ শ নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। সোহেলের মত একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কী অবস্থায় আছেন, আমরা জানতে চাই। তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছি, তারাও সংশয়ের মধ্যে, তার বন্ধু-বান্ধবরা সংশয়ের মধ্যে। আমরা জানতে চাই।পুরো দেশই এখন আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে ‘বন্দি’ মন্তব্য করে রিজভী বলেন, হাবিব উন নবী খানে সোহেল কোথায় আছেন- সে উত্তর তাদের দিতে হবে।যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিএনপির অভিযোগ, তাদের সংক্ষিপ্ত একটি তালিকাও দেন রিজভী।
এছাড়াও রিজভীর প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী সারাদেশে যারা গ্রেফতার হয়েছেন:মৌলভীবাজার: রাজনগর উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সুন্দর বকস, প্রচার সম্পাদক জগলুসহ ১৪ জন;বগুড়া: সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুল আলম শাহীন, কাহালু উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন আজাদ, জেলা যুবদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, যুবদল নেতা বাপ্পী, শাহীন শেখ, ছাত্রনেতা সন্ধান, সোনাতলা উপজেলা জোড়গাছা ইউনিয়ন যুবদল নেতা মিলন, বালুয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা বিটুল ও ফজলু;
রাঙ্গামাটি: জেলা বিএনপি সভাপতি শাহ আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক আবুল হোসেন বালি, জেলা যুবদল সভাপতি সাইফুল ইসলাম শাকিল, সাধারণ সম্পাদক মো.ইলিয়াস, জেলা ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক মো.কামাল উদ্দিন, জেলা যুবদলের নেতা সাখাওয়াত হোসেন সুজা;চট্টগ্রাম: দক্ষিণের বাঁশখালী পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ-আল মবিন; দক্ষিণ জেলার পটিয়া উপজেলায় ৩০ জনের বেশি নেতাকর্মী
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: জেলার কসবা উপজেলাধীন খারেরা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো.মিজানুর রহমান,ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবু হানিফ, কসবা পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক শিমুল, কুঠি ইউনিয়ন ছাত্রদলের নেতা হৃদয়, বাদৈর ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য সোহাগ, রমজান, শাফিউদ্দিন, সাদ্দামসহ ৩০ জন নেতা-কর্মী;ফেনী: জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন ৫নং মহামায়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সম্পাদক মুন্সি একরামুল হক শাহীন, সদর উপজেলা ছাত্রদল নেতা নুর করিমসহ ৭ জন নেতাকর্মী;
দিনাজপুর: জেলা বিএনপি’র আহবায়ক আক্তারুজ্জামানসহ ৩ জন নেতাকর্মী গ্রেফতার;নরসিংদী: রায়পুরা উপজেলা বিএনপি নেতা জালাল উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ফয়েজ উদ্দিন, বিএনপি নেতা রাহাত মিয়া, মোশারফ মিয়া, নেকবুল মিয়া, ওসমান মিয়া, যুবদল নেতা আলমগীরসহ ১৫ জনের বেশি নেতাকর্মী;পাবনা: জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মনোয়ার হোসেন শামীম, পাবনা সদর উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক রিহানুল ইসলাম বুলাল এবং পাবনা বেড়া পৌর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেন। সংবাদ সম্মেলনে দাবি রিজভী আরও দাবি করেন, ময়মনসিংহের উত্তরের ধোবাউড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মফিজ উদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে না পেয়ে তার কলেজ পড়ুয়া ছেলে ফরহাদ আল রাজিকে এবং চট্টগ্রাম মহানগর ইপিজেড থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মো.শাহজাহানকে বাসায় না পেয়ে তার স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে পুলিশ মারধর করতে করতে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে। এছাড়াও জিয়া সাংস্কৃতিক সংস্থা (জিসাস) এর গাজীপুর মহানগরের সাধারণ সম্পাদক বাবুল চৌধুরী এবং ঢাকা মহানগর সদস্য আলমগীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
