সাম্প্রতিক বন্যায় দেশের ৩৫টি জেলার চরম ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় জরুরি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা জন্য সরকার ১০৫ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বরাদ্দ করেছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ বলেন, বরাদ্দ করা অর্থ থেকে দেশের ৩৫টি জেলায় ৯ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে চাল ও শুকনা খাবার বিতরণ এবং নগদ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রাপ্ত চাহিদা অনুযায়ী সরকার আরও অর্থ বরাদ্দ করবে। ব্যাপক ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অর্থ সহায়তার পাশাপাশি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়া পর্যন্ত ত্রাণ কার্যক্রম চলবে এবং আগামী তিন মাস দুর্গত মানুষ ত্রাণসামগ্রী ও নগদ সহায়তা পাবে বলে তিনি জানান।দুর্যোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বাড়িঘর পুননির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৩৫ জেলার ৮১ লাখ ৭৭ হাজার ১৩৫ জন মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। আর সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা ৫৪ হাজার ৭০১টি, আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর ৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬২২টি। এ ছাড়া বন্যার পানিতে ৬ লাখ ৯ হাজার ৭৬১ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।বন্যাকবলিত জেলাগুলো হলো দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, রাঙামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, যশোর,ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট, শেরপুর, ঢাকা, মৌলভীবাজার, গোপালগঞ্জ, কুমিল্লা, রংপুর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, নাটোর, মানিকগঞ্জ ও জামালপুর।
উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে এই পর্যন্ত ১০৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।মোট ২২ জেলা এখন বন্যার কবলে এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা এখন ৩৩ লাখ ২৭ হাজার বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য।এবছর দ্বিতীয় দফা বন্যা উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল ছাড়িয়ে এখন মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত হচ্ছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজনীন শামীমা বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিকাল ৫টা পর্যন্ত মাঠ কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ২২ জেলার তথ্য পেয়েছেন তারা।এসব জেলায় বন্যায় ৮ লাখ ৭০ হাজার ৫২টি পরিবারের ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৮৬৪ জন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর ও রাঙামাটি জেলার ১২২টি উপজেলা ও ৩৮টি পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দিনাজপুর জেলায়। এ জেলার ১৩টি উপজেলার সবগুলোয় বন্যাকবলিত।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বন্যাজনিত কারণে গত জুলাই মাস থেকে এ পর্যন্ত ১০৭ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় । বন্যায় মারা যাওয়া ১০৭ জনের মধ্যে ৯২ জনেরই মুত্যু হয়েছে পানিতে ডুবে। আর সাপে কাটায় মুত্যু হয়েছে ১০ জনের, বজ্রপাতে মারা গেছেন দুজন, এছাড়া অন্যান্য কারণে মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।বন্যাদুর্গত জেলাগুলোর মধ্যে জামালপুরে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানান আবুল কালাম। এ জেলায় ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।এছাড়া সিরাজগঞ্জে ২৩ জন, কুড়িগ্রামে ১৯ জন, গাইবান্ধায় ১১ জন, দিনাজপুরে ৭ জন, লালমনিরহাটে ৬ জন, নীলফামারীতে ৫ জন ও কক্সবাজারে ৩ জন মারা গেছেন।
