পর্যটনের আকর্ষণীয় দুই পাহাড়ি জনপদ বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এ ঈদেও প্রায় পর্যটকশূন্য। গত ঈদুল ফিতরের আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানি হয়। এতে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় ওই ঈদে পুরোপুরি পর্যটকশূন্য ছিল এসব এলাকা। মাস দু-এক পর যোগাযোগ ও অবকাঠামোর উন্নতি হলেও পর্যটন খাত এ সময়ের চিরাচরিত ব্যস্ত চেহারা ফিরে পায়নি। বান্দরবানের হোটেলে আগাম ভাড়া (বুকিং) নেই, ভাড়ায় চালিত যানবাহনে চড়ার মানুষ নেই, পর্যটন স্পটগুলোতে ভিড় নেই। পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, ঈদের পরের দিনও এ অবস্থার খুব বেশি উন্নতি হওয়ার লক্ষণ নেই।বান্দরবানের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত রমজানের ঈদের চেয়ে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে। রোববার থেকে কিছু চলমান পর্যটক (রানিং ট্যুরিস্ট) আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁরা সকালে এসে বিকেলে ফিরে না গিয়ে রাতে থাকলে পর্যটনের নাকাল অবস্থা কিছুটা কেটে যেতে পারে।
আজ সকালে জেলা শহরতলির নীলাচল পর্যটনকেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টায় দেখা যায়, পর্যটকের সংখ্যা একেবারেই কম। টিকিট কাউন্টারের ব্যবস্থাপক গুঞ্জন তঞ্চঙ্গ্যা বললেন, আগামীকাল পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে পারে। তবে রমজানের ঈদেও প্রত্যাশা অনুযায়ী হয়নি। জেলা শহরের প্রবেশমুখ মেঘলা পর্যটনেও কোনো ভিড় নেই। বিকেলে হয়তো কিছু লোকজন আসতে পারে বলে জানালেন কাউন্টারের লোকজন।বান্দরবান বাসস্টেশন-সংলগ্ন হিলভিউ ও হিলটন হোটেলে সব সময় পর্যটকের আনাগোনা থাকে। কিন্তু এবার সেখানেও ভিন্নচিত্র। ব্যবস্থাপক স্বপন বড়ুয়া বলেছেন, আগামীকাল ও পরশু ২০ শতাংশ কক্ষ আগাম ভাড়া হয়েছে। হিলটন হোটেলে আরও কম বলে জানালেন ব্যবস্থাপক রোমিও। স্বপন ও রোমিও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ধস ও সমতলে বন্যা পর্যটক কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। দুর্বল সেবা সরবরাহ শৃঙ্খলাও পর্যটকদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার অন্যতম কারণ। এবারের ঈদে ছুটি কম হওয়াও একটা প্রভাব পড়েছে বলে তাঁরা মনে করেন।হোটেল-মোটেল মালিক ও শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, বান্দরবান জেলা শহরে ৫২টি হোটেল-মোটেলে প্রায় পাঁচ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ধারণক্ষমতার ২০ শতাংশও বুকিং হয়নি। জেলা শহরতলির পর্যটন মোটেল, মিলনছড়ি হিলসাইড রিসোর্ট, হলিডে ইনসহ ছোট-বড় সব হোটেল ফাঁকা। আগামীকাল চলমান পর্যটকেরা এসে যদি জেলা শহরে থেকে যান, তাহলেই অবস্থার অগ্রগতি হতে পারে।ঢাকা-বান্দরবান চলাচলকারী পরিবহন সংস্থাগুলোর কয়েকটিতে আগামীকাল বাড়তি চাপ থাকলেও অধিকাংশেই কোনো চাপ নেই বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন। পর্যটক না আসার ব্যাপারে পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও বলেছেন, জেলায় পর্যটকদের সেবা সরবরাহ শৃঙ্খলায় অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে।প্রায় ফাঁকা পড়ে আছে বান্দরবানের জনপ্রিয় পর্যটন স্থান নীলাচল। আজ সকালে তোলা ছবি: ছবি: বুদ্ধজ্যোতি চাকমাবান্দরবানের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেছেন, পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঈদে পর্যটকদের উপভোগ্য করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বৃষ্টিপাত না থাকলে হয়তো পর্যটক আসবে। নিরাপত্তা ও বিনোদন ব্যবস্থা, কোনো কিছু ঘাটতি নেই। হাজারো পর্যটকের অপেক্ষায় রয়েছে বান্দরবান।গত ১৩ জুন রাঙামাটি ও খাগড়াছড়িতে পাহাড়ধসের পর থেকে খাগড়াছড়ির পর্যটনকেন্দ্রগুলো এখনো ফাঁকা পড়ে আছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে হোটেল-মোটেলের মালিকদের। পাশাপাশি তাঁতের কাপড় ও হস্তশিল্পের ব্যবসায়ীরাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে ও আজ শনিবার দুপুরে খাগড়াছড়ি শহর ও শহরের বাইরে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সবই ফাঁকা। রেস্তোরাঁ ও হস্তশিল্পের দোকানগুলোতে দেখা যায়নি তেমন কোনো লোকজন। তবে পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্কে বেড়াতে এসেছিলেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা।জেলা পরিষদ পার্কে বেড়াতে আসা মো. মাইনুদ্দিন বলেন, ‘ঈদের দিন এমন ফাঁকা আগে দেখিনি। অথচ আগে ঈদের দিন পার্কে ঢোকার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হতো।’আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের টিকিট বিক্রেতা লোকনাথ ত্রিপুরা বলেন, প্রতিবছর ঈদের দিন দুই-তিন হাজার টিকিট বিক্রি হয়। কিন্তু এই ঈদে দুপুর গড়ালেও ৩০টির বেশি টিকিট বিক্রি হয়নি। অন্যদিকে ঈদে পর্যটক না পেয়ে গতকাল থেকে আজ সকাল পর্যন্ত কিছু বিক্রি করতে পারেননি পাহাড়ি টেক্সটাইলের মালিক বিকিরন রোয়াজা।খাগড়াছড়ির হোটেল গাইরিংয়ের ব্যবস্থাপক মো. নয়ন বলেন, আমাদের হোটেলে ৩৭টি কক্ষ রয়েছে। আগামী সোমবার পর্যন্ত মাত্র ৩টি কক্ষে বুকিং দেওয়া আছে। অথচ গত বছর ঈদের আগে ও পড়ে এক সপ্তাহ পর্যন্ত কোনো কক্ষ খালি ছিল না।পাহাড়ধসের কারণে পর্যটনকেন্দ্র সাজেক যাওয়ার সড়কটি প্রায় সময় বন্ধ থাকায় পর্যটক আসছেন না বলে জানান খাগড়াছড়ি হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস অনন্ত ত্রিপুরা। তিনি বলেন, খাগড়াছড়িতে ১৭টি হোটেল ও মোটেল আছে। গত ঈদেও দু-একটা ছাড়া প্রায় সবগুলোই খালি ছিল। আশা করেছিলাম এবার ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। কিন্তু এবারের ঈদেও একই অবস্থা।
