চাঞ্চল্যকর জাপানি নাগরিক হোশিও কোনি হত্যা মামলায় জেএমবির পাঁচ জঙ্গির ফাঁসির আদেশ এবং এজজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছে রংপুরের স্পেশাল জজ আদালত। মঙ্গলবার বেলা ১১ টায় এ রায় দেন রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকার। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা আসামিদের উপস্থিতিতে ৬৬ পাতার রায় পড়া শেষে এ আদেশ দেন বিচারক। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, জেএমবির পীরগাছার আঞ্চলিক কমান্ডার পীরগাছা উপজেলার পশুয়া টাঙ্গাইলপাড়ার মাসুদ রানা ওরফে মামুন ওরফে মন্ত্রী (২১), একই এলাকার জেএমবির সদস্য ইছাহাক আলী (২৫), বগুড়ার গাবতলী এলাকার জেএমবির সদস্য লিটন মিয়া ওরফে রফিক (২৩), গাইবান্ধার সাঘাটার হলদিয়ার চর এলাকার সাখাওয়াত হোসেন (৩২) ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পলাতক শিক্ষার্থী আহসান উল্লাহ আনছারী।
মামলা থেকে বেকসুর খালাস প্রাপ্ত আসামী হলেন পীরগাছার কালীগঞ্জ বাজারের জেএমবির সদস্য আবু সাঈদ (২৮)। গত ১৯ ফেব্র“য়ারি আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে মঙ্গলবার (২৮ ফেব্র“য়ারি) রায় ঘোষণার দিন ধার্য করায় আগে থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আদালত চত্বর ও এর আশেপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আদালতের সীমানা প্রাচীরের একাধিক দরজা বন্ধ করে শুধু একটি মাত্র দরজা খোলা রাখায় প্রতিদিনের মামলা পরিচালনার বাদী বিবাদী সহ বিভিন্ন প্রয়োজনে আসা মানুষেরা ভোগান্তিতে পড়েন। যে কোন ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা রুখতে পুলিশ সন্দেহ জনক ব্যক্তিদের তল্লাশী করে আদালত চত্বরে প্রবেশ করার অনুমিত দেন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী বিশেষ পিপি রথীশ চন্দ্র ভৌমিক জানান, এটি একটি কাঙ্খিত রায়। তবে বেকসুর খালাস প্রাপ্ত আসামী আবু সাঈদের বিষয়টি নিয়ে আমরা উচ্চতর আদালতে যাব। তিনি আরও বলেন,এ মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে গত বছরের ৩ জুলাই দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তৎকালীন কাউনিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী। আসামী পক্ষের আইনজীবী আফতাব হোসেন ও আবুল হোসেন বলেন, রায়ের কাগজ পত্র হাতে পেলে উচ্চতর আদালতে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ৮ আসামীর মধ্যে ৫ জানুয়ারি সাদ্দাম হোসেন ঢাকায় এবং অপর আসামি নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক হাসান গত বছরের ১ আগস্ট রাজশাহীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে ৬৬ বছর বয়সি জাপানি নাগরিক হোশিও কোনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।ওই বছরের ১৩ অক্টোবর কাউনিয়া আমলি আদালত-২ এর বিচারক আরিফুল ইসলাম শুনানি শেষে মামলাটি রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। পরে ২৬ অক্টোবর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবীর বিচারের জন্য মামলাটি বিশেষ জজ আদালতে স্থানান্তর করেন। এ মামলায় বাদী পক্ষে ৫৫ জন এবং আসামি পক্ষে একজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত ১৪ ফেব্র“য়ারি আসামি সাখাওয়াত হোসেনের পক্ষে আব্দুল মজিদ মন্ডল আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণের পর্ব এবং যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রমের যাবতীয় পর্ব শেষ হয়। মঙ্গলবার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে প্রায় দেড় বছর পররংপুরে চাঞ্চল্যকর জাপানি নাগরিক হোশিও কোনি হত্যা মামলার নি¤œ আদালতে আইনগত নিষ্পত্তি হলো।তবে জাপানী নাগরিক হোসিও কোনি হত্যার প্রকৃত ঘটনা বের হওয়া এবং নি¤œ আদালতে নিস্পত্তি হওয়ায় রংপুরের সচেতন মানুষেরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত: ঘটনার পরপর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস এর দায় স্বীকার করলেও সরকার আইএসের দাবি প্রত্যাখ্যান করে।ঘটনার পর সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশ কুনিওর ব্যবসায়িক সহযোগী হুমায়ুন কবির হীরা, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য রাশেদ-উন-নবী খান বিপ্লব, রংপুর মহানগর যুবদলের সদস্য রাজীব হাসান সুমন ওরফে মেরিল সুমন, নওশাদ হোসেন রুবেল ওরফে ব্লাক রুবেল ও নগরীর শালবন মিস্ত্রিপাড়ার কাজল চন্দ্র বর্মণ ওরফে ভরসা কাজলকে গ্রেপ্তার করে। তাদের একাধিকবার রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। বর্তমানে তারা সকলে জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন।
