শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালের নবেম্বরে প্রথমে কুয়াকাটার প্রতি দৃষ্টি দিয়েছিলেন। তার নির্দেশনায় কুয়াকাটায় পর্যটন মন্ত্রনালয় প্রথম জমি অধিগ্রহনের কাজ শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্যে রাজনীতি করার সুযোগ হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ১৯৭০ এর নির্বাচনের আগে বিশেষ লঞ্চ নিয়ে তিনি বৃহত্তর বরিশালের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখেছেন। তখন তিনি এসব অঞ্চলের সম্ভাবনাময় দিকগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। সোমবার শেষ বিকেলে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু মেগাবিচ কার্ণিভ্যাল কুয়াকাটা ২০১৭ এর সমাপনি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আরও বলেন, সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের অপরুপ দৃশ্য অবলোকনের একমাত্র পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, কুয়াকাটার সী-বিচ রক্ষাকল্পে সরকারের ব্যাপক পরিকল্পনা রয়েছে। বিদেশী পর্যটকের কাছে আকর্ষণীয় করতে কুয়াকাটাকে প্রস্তুত করা হবে। ১৯৯৮ সালে কুয়াকাটাকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে উন্নয়নের কাজ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন পর্যটন হলিডে হোমস এর দ্বিতল ভবনের উদ্বোধন করেন উল্লেখ করে জনাব আমু বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তখনই দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হয়। বরিশালে শিক্ষাবোর্ড ও বিশ্ববিদ্যালয় করা করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, পায়রা বন্দর নির্মাণ এই অঞ্চলের উন্নয়নের বড় দিক। এখানে এই অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পায়রা বন্দরের ভূমিকা অপরিসীম উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কুয়াকাটার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে ইতোমধ্যে তিনটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা ব্রিজের কাজ চলছে দ্রুতালয়ে। জনাব, আমু আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করেছি। এই দেশ দরিদ্র নয়, বরং ধনী দেশে পরিণত হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে- এতে আর কোন সন্দেহ নেই। তিনি গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সকল উন্নয়ন কর্মকান্ডের ধারা অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য উপস্থিত সকলকে আহ্বান জানান। তিনি আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোটকে দায়ী করে বলেন, তারা বোমা হামলা করে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত করার অপচেষ্টা করেছিল। এই অঞ্চলে বিসিকের উদ্যোগে ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ রয়েছে বলে জানান। মন্ত্রী কুয়াকাটায় তিনদিনের বিচ কার্ণিভ্যাল কুয়াকাটা ২০১৭ এর সমাপনি ঘোষণা করেন।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক একেএম শামীমুল হক সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, আলহাজ মাহবুবুর রহমান এমপি, একেএমএ আউয়াল এমপি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব তপন কুমার সরকার, পর্যটন কর্পোরেশনের অতিরিক্ত সচিব অপরুপ চৌধুরী, পটুয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খান মোশাররফ হোসেন, পুলিশ সুপার সৈয়দ মোসফিকুর রহমান, কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব তালুকদার, ঝালকাঠি পৌরসভার মেয়র আলহাজ লিয়াকত আলী, কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার, কুয়াকাটার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা। স্বাগত বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও আক্তারুজ্জামান খান কবির। মেগাবিচ কার্ণিভ্যাল কুয়াকাটা ২০১৭ এর সমাপনি দিন সোমবার সকালে বিচ ক্লিনিংএর কর্মসূচিতে অংশ নেয় স্থানীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ। সন্ধ্যায় শুরু হয় জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দেশবরেন্য শিল্পীরা মনোজ্ঞ সঙ্গীতানুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন। স্থানীয় হাজারো মানুষসহ শত শত পর্যটক গভীর রাত পর্যন্ত উপভোগ করেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পর্যটককেন্দ্র কুয়াকাটাকে সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করতে ১৪ জানুয়ারি শুরু হয় মেগাবিচ কার্ণিভ্যাল কুয়াকাটা ২০১৭। এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে কুয়াকাটার মানুষের মধ্যে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে এ বিচ কার্ণিভ্যালের সুন্দরবন ট্যুরসহ বেশ কিছু ইভেন্ট বাতিল হওয়ায় ট্যুরিস্টরা ক্ষুব্ধ মনোভাব পোষণ করেছেন। আলোকসজ্জা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন কুয়াকাটার ব্যবসায়ীরা। সৈকতের বেলাভূমে নির্মিত অস্থায়ী কটেজের মান নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আগত পর্যটকরা। তাদের সুপারিশ আগামিতে এ কার্ণিভ্যালে যেন কুয়াকাটার ইতিহাস-ঐতিহ্য যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়। তবে আবাসিক হোটেল ও খাবার হোটেলগুলোতে গলাকাটা বাণিজ্যের মানসিকতা আগতদের অনেকটা ব্রিতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে। একাধিক পর্যটক এজন্য স্থানীয় প্রশাসনকে দুষলেন। ১৪ জানুয়ারিএ কার্ণিভ্যালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এমপি।
