সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে পিতা-মাতার চিন্তার অন্ত থাকে না। পিতা-মাতার লক্ষ্য থাকে সন্তানকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে মানুষের মত মানুষ করা। ধনী কিংবা গরীব, প্রত্যেক পিতা-মাতার উদ্দেশ্য সন্তানের ভবিষ্যৎ। কিন্তু অনেক সময় সন্তানকে নিয়ে পিতা-মাতার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যায়। বিশেষ করে দারিদ্রতার কাছে হার মানতে হয়। আবার সক্ষমতা থাকলেও নানা কারনে তা সম্ভব হয় না। তবে দারিদ্রতার কাছে হার না মানা এক দম্পত্তি নুরুল-পারুল। স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজেদের ইচ্ছা শক্তি যথেষ্ট সেটা প্রমাণ করেছেন এই দম্পত্তি। তাদের বাড়ী খুলনার পাইকগাছা উপজেলার সরল গ্রামে। গর্বিত এ দম্পত্তি এক ছেলে ও এক মেয়ের পিতা-মাতা। ছোট সংসার হলেও চরম দারিদ্রতার মধ্যে দিন কাটে তাদের।
কঠোর পরিশ্রম আর প্রবল ইচ্ছা শক্তির কারনে ছেলেকে বেসরকারী একটি মেডিকেল কলেজে পড়াচ্ছেন। এই দম্পত্তি তেলের ঘানি ঘুরিয়ে দুই সন্তানকে লেখাপড়া করাছেন। মেয়েটি পড়ছে স্থানীয় উচ্চ মাধ্যমিক একটি প্রতিষ্ঠানে। ছেলে ও মেয়ে উভয়ই ৫ম ও ৮ম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভ করে। ছেলেটি ২০০৯ সালে গোল্ডেন এ প্লাস নিয়ে পাইকগাছা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১১ সালে পাইকগাছা কলেজ থেকে জিপিএ-৫ নিয়ে এইচএসসি পাস করে প্রথমে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিসারিজ বিভাগে ভর্তি হয়। এরপর খুলনার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুযোগ হওয়ায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অব্যহতি নিয়ে গরীব ও মেধাবী কোটায় বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। বর্তমানে সে মেডিকেলের শেষ বর্ষের ছাত্র। পাইকগাছা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের সরল প্রামের মৃত জাহান আলী গাজীর ছেলে নুরুল হক গাজী জানান, সহায়সম্বল বলতে মাত্র দুই শতক জমির উপর বসতবাড়ী ছাড়া আর কোনো কিছু নাই।
দিন মজুর ও ঘানি ঘুরিয়ে চালাতে হয় সংসার। এরপর রয়েছে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া। ঘানি ঘুরিয়ে তেল বের করা তাদের পেশা। তবে পিতা-মাতা যখন বেঁচে ছিল তারা গরু দিয়েই ঘানি ঘুরাতো। কিন্তু অভাব অনটনের কারনে একটি গরু কিনতে পারিনি। তাই বাধ্য হয়ে স্বামী-স্ত্রী দুজনই গত ১৫ বছর যাবৎ ঘানি টানার কাজ করে আসছি। বাজার থেকে সরিষা কিনে এনে প্রতি ২/৩ দিন পরপর সরিষা মাড়াই করে তেল তৈরী করি। প্রতিবার সাড়ে ৪ কেজি সরিষা মাড়াই করতে প্রায় ৪ ঘন্টা দুই মন ওজন বোঝায় দেওয়া ঘানি ঘোরাতে হয়। প্রতি কেজি সরিষায় ৩০০ মিঃলিঃ তেল হয়। যা বাড়িতেই বসে ২৫০ টাকা লিটার প্রতি বিক্রি করা হয়। এতে খরচ বাদে ১৫০ টাকা মত লাভ হয়। এ ছাড়া সময় পেলে দিন মজুরের কাজ করেন নুরুল। যে খানে নুন আনতে পানতা পুরায় তার পরও ছেলে মেয়ের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক সময় ধার দেনা করে খরচ যোগাতে হয়। এমন অভাব অনটনের মধ্যদিয়ে ছেলে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করা প্রসঙ্গে নুরুল-পারুল দম্পত্তি জানান, ইচ্ছে ছিল ছেলে মেয়েকে মানুষের মত মানুষ করবো। শত অভাব অনটনের মাঝেও আল্লাহ সেই ইচ্ছা পুরণ করছে। প্রথম দিকে সংশয় প্রকাশ করলেও এখন মনে হয় সন্তানের লেখাপড়ার জন্য দারিদ্রতা কোনো বাঁধা নয়। ইচ্ছা শক্তিটাই যথেষ্ট। জীবন সংগ্রাম অনেক কষ্টের হলেও যখন দেখি ছেলে মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে তখন সব কষ্ট ভুলে যাই। সন্তানরা যখন লেখাপড়া শেষ করে দেশ জাতির ও সমাজের জন্য উপকারে আসবে তখন আমাদের সারা জীবনের ত্যাগ ও কষ্ট সার্থক হবে। এদিকে হতদরিদ্র নুরুল পরিবারের পাশে এসে সমাজের স্বহৃদয়বান ব্যক্তিরা সহযোগিতার হাত বাড়াবেন এমনটাই প্রত্যাশা সকলের। সাহায্য পাঠাবার ঠিকানা পারুল, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক পাইকগাছা শাখা, খুলনা। সঞ্চয়ী হিসাব নং- ৯৪৬০।
