রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের ঘোষণার ৩৪ বছরেও বাস্তবায়িত্ব হয়নি সুন্দরবন জেলা। ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি স্থানীয় জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে খুলনার পাইকগাছায় এক জনসভায় সুন্দরবন মহকুমা ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ৩৪ বছর পেরিয়ে গেলেও সেই দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। সে সময়ের মহকুমাগুলো এখন জেলা। সঙ্গত কারণেই খুলনার দক্ষিণাংশের দুর্গম পাইকগাছা ও কয়রার মানুষ ‘সুন্দরবন জেলা’ গঠিত না হওয়ায় হতাশ। এখানকার নেতৃস্থানীয়রা বলছেন, জেলার দাবি বাস্তবায়নে তারা আবার জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলবেন। খুলনা জেলার সর্বদক্ষিণে অবস্থিত দু’টি উপজেলা কয়রা ও পাইকগাছা। ১৭টি ইউনিয়নে প্রায় আট লাখ জনগোষ্ঠীর বসবাস এখানে। এক সময় পাইকগাছা ও কয়রা থানা মিলে পাইকগাছা হিসেবে পরিচিত ছিলো। যার আয়তন ছিল ৮৫০ বর্গমাইল। খুলনা সদর থেকে যশোর জেলা শহরের দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার, বাগেরহাটের দূরত্ব ৩৩ কিলোমিটার, সাতক্ষীরার দূরত্ব ৫৬ কিলোমিটার।
অথচ খুলনা শহর থেকে পাইকগাছার দূরত্ব ৬৮ ও কয়রার দূরত্ব ১২০ কিলোমিটার। পাইকগাছা ও কয়রার দক্ষিণে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগর। এলাকাটি নদ নদী, খালবেষ্টিত ও দুর্গম। সে কারণে জেলা শহরের সঙ্গে যাতায়াতে সীমাহীন ভোগান্তি পোহান দুই উপজেলার বাসিন্দারা। কয়রা থেকে খুলনায় পৌঁছুতে যে সময় লাগে, প্রায় একই সময়ে রাজধানী ঢাকার কাছাকাছি চলে যাওয়া যায়। স্থানীয়রা জানান, এমন অবস্থায় যার প্রেক্ষিতে ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বর্তমান কয়রার জায়গীরমহলের এক জনসভায় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সুন্দরবন মহকুমা গঠনের ঘোষণা দেন। সে সময় বিদ্যমান মহকুমাগুলো এখন জেলা। সঙ্গত কারণে পাইকগাছা জেলা হওয়ার দাবি রাখে। এলাকাবাসীর এই দাবি পুরোপুরি যৌক্তিক বলে মনে করেন সুন্দরবন জেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জি এ সবুর। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির ঘোষণা বাস্তবায়ন না হওয়ায় অ্যাডভোকেট জি এ সবুরকে আহ্বায়ক ও অ্যাডভোকেট স ম ইউসুফ আলীকে (বর্তমানে মৃত) সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্যবিশিষ্ট সুন্দরবন জেলা বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়।
এই কমিটি দাবি আদায়ে আন্দোলন করে। পরে ২০০১ সালে সুন্দরবন জেলা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি গঠন করা হয়। যার আহবায়ক জি এম মিজানুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট প্রশান্ত কুমার মন্ডল ও সাংবাদিক স্নেহেন্দু বিকাশ। প্রস্তাবিত সুন্দরবন জেলার জনপদ হিসেবে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন, খুলনার দাকোপের একাংশ, সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন নিয়ে মানচিত্র তৈরি করা হয় বলে পাইকগাছা পৌরসভা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক শেখ শাহাদাৎ হোসেন বাচ্চু জানান। বর্তমানে পাইকগাছা উপজেলায় একটি পৌরসভা, একটি মৎস্য গবেষণা কেন্দ্র, নয়টি কলেজ, দুটি সরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার জন্য পৃথক সিনিয়র সহকারী জজ আদালত ও সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত রয়েছে। পাইকগাছা নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং আইন জীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট প্রশান্ত মন্ডল জানান, নাগরিক অধিকার বাস্তবায়ন কমিটি লিফলেট বিতরণ করেছে এবং আগামীতে সুন্দরবন জেলা বস্তবায়নে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবে। পাইকগাছা পৌরসভার মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, জেলা দাবি বাস্তবসম্মত। যতদিন এ দাবি পূরণ না হচ্ছে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। শিগগির আমরা কর্মসূচি ঘোষণা করবো।জেলা বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়ক জি এ সবুর বলেন, জেলা ঘোষণার দাবি আদায়ে আমরা কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
