ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার বিরুদ্ধে মামলা করতে যাচ্ছেন কাতারে কর্মরত এক বাংলাদেশি শ্রমিক। নাদিম শরিফুল আলম নামে ওই শ্রমিকের অভিযোগ, কাতারে আগামী ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনে নির্মাণকাজে শোষণের শিকার হয়েছেন তিনি। আর এজন্য ফিফাকে দায়ী করছেন তিনি।
বিবিসি জানিয়েছে, অতিরিক্ত পরিশ্রম, পর্যাপ্ত খাবার ও বিশ্রামের অভাবে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা ও ক্ষতিপূরনের দাবিতে আইনি লড়াইয়ে নামছেন ২১ বছর বয়সী শরিফুল। এটি হতে যাচ্ছে ফিফার ইতিহাসে প্রথম মামলার ঘটনা। স্থানীয় সময় সোমবার মামলার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করা হয়। তিন সপ্তাহ সময় দিয়ে ফিফার সভাপতির কাছে পাঠানো আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে দায় স্বীকার করে শরিফুলকে ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যর্থ হলে সংস্থাটির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জুরিখে দায়ের করা অভিযোগের খসড়া চিঠিতে বলা হয়েছে, ফিফা বিদেশি শ্রমিকদের সাথে ন্যায্য আচরণ করতে কাতারকে বাধ্য করার ক্ষেত্রে নিজের প্রভাব খাটাতে ব্যর্থ হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ফিফা কিংবা কাতার সরকারের কোনো মন্তব্য জানাতে পারেনি রয়টার্স। তবে অনেক মানবাধিকার সংগঠন অনেকদিন ধরেই অনেকটা একই রকমের অভিযোগ করে আসছে।
ক্ষতিপূরণ হিসেবে ফিফার কাছে সাড়ে ১১ হাজার মার্কিন ডলার দাবি করেছেন শরিফুল। একজন নিয়োগকর্তাকে চার হাজার ডলার পরিশোধ করে তিনি কাতারে কাজ করতে আসেন। নেদারল্যান্ডসের সবচে বড় ট্রেড ইউনিয়ন এফএনভি এ মামলা পরিচালনায় শরিফুলকে সহায়তা দিচ্ছে। মামলার আর্জিতে কাতারকে বিদেশি শ্রমিকদের জন্য ‘ন্যূনতম শ্রমমান’ নির্ধারণের আহ্বান জানানো হয়েছে, যেখানে একজন শ্রমিকের অন্তত নিজের ইচ্ছেমতো চাকরি ছেড়ে দেওয়ার এবং চাইলে কাতার ছেড়ে চলে যাওয়ার অধিকার থাকবে। জুরিখের বাণিজ্যবিষয়ক আদালতে পাঠানো মামলার আর্জিতে বলা হয়েছে, কাতারে পৌঁছানোর পরই নাদিম শরিফুল আলমের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়। আর্জিতে উল্লেখ করা হয়, পরবর্তী ১৮ মাস তাকে অত্যন্ত প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। জাহাজ থেকে নির্মাণ সামগ্রী খালাসের কাজ করতেন শরিফুল।
শরিফুল জানান, শ্রমিকদের থাকার জন্য বানানো বড় একটি ক্যাম্পে তিনি কার্যত বন্দি ছিলেন, সেখানেই ছিল খাবারের ব্যবস্থা। আবেদনে শরিফুল জানিয়েছেন, যখন তাকে চাকরিচ্যুত করে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়, তখন তাঁর হাতে খুব অল্প অর্থ ছিল। এমনকি নিয়োগকারী সংস্থার ফি মেটানোর অর্থ তার কাছে ছিল না।
২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য গ্যাস সমৃদ্ধ কাতার ২০ হাজার কোটি ডলারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজ করবে, যার মধ্যে কয়েকটি ফুটবল স্টেডিয়ামও নির্মাণের কথা আছে। এ কাজে নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারত থেকে কয়েক লাখ শ্রমিক নিয়োগ করেছে কাতার।
বিদেশি শ্রমিকেরা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মতোই ‘কাফালা’ পদ্ধতিতে কাজ করেন, যেখানে চাকরি বদলাতে হলে কিংবা দেশ ছাড়তে নিয়োগকারীর অনুমতি নিতে হয়। বিক্ষোভ করা বা শ্রমিকদের জোট করলে বিদেশি শ্রমিকদের কারাদণ্ড এবং দেশত্যাগে বাধ্য করার বিধান আছে। এর আগে কাতার বিদেশি শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে পারছে না, এমন অভিযোগ শোনা গেছে।
এরইমধ্যে এর সমালোচনা করে বিবৃতি দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং ভবনশ্রমিক ও কাঠমিস্ত্রিদের আন্তর্জাতিক সমিতি। তবে, সম্প্রতি দেশটি বর্তমান শ্রম আইন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে এবং এ বছরের ডিসেম্বর থেকে এই নিয়ম চালু করা হবে যে নিয়োগকারী দেশ ছাড়তে অনুমতি না দিলে একজন বিদেশি শ্রমিক সরকারের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
