ভারত কিছুদিনের মধ্যেই তার নিজস্ব গ্লোবাল পজিশনিং ব্যবস্থা বা জিপিএস তৈরি করতে চলেছে। ভারত বৃহস্পতিবার ইন্ডিয়ান রিজিওন্যাল ন্যাভিগেশান স্যাটেলাইট সিস্টেম বা আইআরএনএসএস সিরিজের সপ্তম ও শেষ কৃত্রিম উপগ্রহটি কক্ষে স্থাপনের মাধ্যমে নিজস্ব ন্যাভিগেশন ব্যবস্থা তৈরির প্রাথমিক কাজটি শেষ করেছে। এতদিন ভারত সামরিক আর বেসামরিক ক্ষেত্রে দিকনির্ধারণ ব নেভিগেশনের জন্য মূলত যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস ব্যবস্থার ওপরেই নির্ভর করত।
ভারতের মহকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও ইউরোপ, রাশিয়া বা চীনের যে জিপিএস ব্যবস্থা আছে, ভারতের নিজস্ব ব্যবস্থাটি আরও উন্নত ও নির্ভুল হবে। এই নতুন জিপিএস ব্যবস্থা স্থল, জল আর আকাশ পথে দিকনির্ণয়ে সাহায্য করবে। ভারত তার যে নিজস্ব দিকনির্ধারণ বা নেভিগেশন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চলেছে, তার নাম দেয়া হচ্ছে নেভিগেশন উইথ ইন্ডিয়ান কনস্টেলেশন বা ‘নাভিক’।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, শত শত বছর ধরে মৎসজীবী আর নাবিকেরা আকাশের চাঁদ-তারা দেখেই সমুদ্রে দিক নির্ণয় করতেন। সেসব প্রাচীন নাবিক বা মৎসজীবীদের সম্মান জানাতেই নতুন জিপিএস ব্যবস্থার নাম দেয়া হয়েছে ‘নাবিক’।মহাকাশ এবং সমরাস্ত্র নিয়ে গবেষণা করেন অবসরপ্রাপ্ত গ্রুপ ক্যাপ্টেন অজয় লেলে। ভারতের ইনস্টিটিউট অব ডিফেন্স স্টাডিস এন্ড অ্যানালিসিসের এই সিনিয়র গবেষক বলছিলেন, ‘এখনকার যুগে নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলাটা কৌশলগত কারণেই খুব গুরুত্বপূর্ণ। অন্য দেশের ওপরে এখনও আমাদের নির্ভর করতে হয় ন্যাভিগেশনের জন্য। এরকম কখনও হতেই পারে, যেসব দেশের জিপিএস ব্যবহার করা হয়, হঠাৎই তারা সেটা আমাদের দেয়া বন্ধ করে দিল।’
লেলে আরও বলছিলেন, ‘সবচয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস ব্যবস্থার তুলনায় ভারতের এই নিজস্ব জিপিএস ব্যবস্থা হবে অনেক নিখুঁত।’ যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস ব্যবস্থা ছাড়াও রাশিয়ার গ্লসনাস, ইউরোপের গ্যালিলেও আর চীনের বেইদোউ জিপিএস ব্যবস্থাই এখনও পৃথিবীর অন্যান্য সব দেশ ব্যবহার করে থাকে। জিপিএস ব্যবস্থা যেরকম সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয়, তেমনি বেসামরিক ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সামরিক ব্যবহারকারীদের জন্য অবশ্য জিপিএস ব্যবস্থায় অনেক কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হয়। বিমান, জাহাজ বা নৌ-চলাচল থেকে শুরু করে দুর্যোগ মোকাবিলা সব কিছুই নিজস্ব জিপিএস ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক নিখুঁতভাবে করা যাবে বলে বিজ্ঞানীরা আশা করছেন। যুুক্তরাষ্ট্র ২৪টি কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে যে জিপিএস ব্যবস্থা গড়েছে, তা আদতে সামরিক প্রয়োজনেই তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু অসামরিক ক্ষেত্রই সেই ব্যবস্থা এখন বেশি ব্যবহার করে। ভারতের নিজস্ব ব্যবস্থাটিও সেরকমই দুই ধরনের ব্যবহারকারীদের জন্যই তৈরি হচ্ছে অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থার আদলে। ভারতের সীমানার চারদিকে দেড় হাজার কিলোমিটার এলাকার মধ্যে তথ্য সংগ্রহ করবে ‘নাবিক’ ব্যবস্থা। তাই প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো চাইলে অন্য দেশের জিপিএসের পরিবর্তে ভারতের জিপিএস ‘নাবিক’ ব্যবহার করতে পারবে।
