বাংলাদেশের শীর্ষ ৩০০ ঋণ খেলাপির তালিকা সংসদে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।একই সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে পাঁচ কোটি টাকার বেশি ঋণ নিয়েছেন, এমন ১৪ হাজার ৬১৭ জনের পূর্ণাঙ্গ তথ্যও দিয়েছেন তিনি।
শনিবার সংসদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. ইসরাফিল আলমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী এ তালিকা দেন।
তালিকায় দেখা যায়, দেশে মোট ঋণখেলাপি ১ লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ জন। এদের কাছে সরকারের পাওনা ১ লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে ঋণখেলাপির সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৩৬ জন এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ২১০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এদের মধ্যে শীর্ষ ৩০০ ঋণখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানাসহ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
খেলাপি ঋণের শীর্ষ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সামানাজ সুপার ওয়েল লিমিটেডের খেলাপির পরিমাণ ১ হাজার ৪৯ কোটি, গ্যালাক্সি সোয়েটার অ্যান্ড ইয়ার্ন ডাইংয়ের খেলাপির পরিমাণ ৯৮৪ কোটি টাকা, রিমেক্স ফুডওয়্যার লিমিটেডের ৯৭৬ কোটি টাকা, কোয়ান্টাম পাওয়ার সিস্টেম লিমিটেডের ৮২৮ কোটি টাকা, মাহিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের ৮২৫ কোটি টাকা, রূপালি কম্পোজিট লেদার ওয়্যার লিমিটিডের ৭৯৮ কোটি টাকা, ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ৭৭৬ কোটি টাকা।
এছাড়া এসএ ওয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের খেলাপি ঋণ রয়েছে ৭০৭ কোটি টাকা, সুপ্রভ কম্পোজিট নিট লিমিটেডের ৬১০ কোটি টাকা, গ্রামীণ শক্তির ৬০১ কোটি টাকা, সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেডের ৫৮২ কোটি টাকা, কম্পিউটার সোর্স লিমিটেডের ৫৭৫ কোটি, সিমরান কম্পোজিট লিমিটেডের ৫৬৪ কোটি টাকা, ম্যাক্স ইস্পিনিং মিলসের ৫২৬ কোটি টাকা, বেনটেক্স ইন্ডাজট্রিজ লিমিটেডের ৫২৩ কোটি টাকা, আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস লিমিটেডের ৫২৩ কোটি টাকা, সিদ্দিক ট্রেডার্সের ৫১১ কোটি টাকা, রুবাইয়া ভেজিটেবল ওয়েলস ইন্ডাট্রিজ লিমিটেডের ৫০১ কোটি টাকাে এবং রাইজিং স্টিল লিমিটেডের ৪৯৫ কোটি টাকা উল্লেখযোগ্য।
শীর্ষ ৩০০ ঋণ খেলাপির কাছে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা আছে ৫০ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা।২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫ কোটি টাকার বেশি ঋণ নেওয়া ১৪ হাজার ৬১৭ জনের বড় একটি অংশ ঋণ খেলাপি, যাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এক লাখ ১৮৩ কোটি টাকা।
আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ৩৯ মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ৪৩ হাজার ২১০ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ সময়ে ঋণ খেলাপির সংখ্যা বেড়েছে ৫৮ হাজার ৪৩৬ জন। সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খান তার প্রশ্নে ২০০৯ সালে ঋণ খেলাপি কত ছিল ও তাদের কাছে প্রাপ্ত ঋণের পরিমাণ এবং ২০১৮ সালে ওই সংখ্যা ও অর্থের পরিমাণও জানতে চেয়েছিলেন।
তবে অর্থমন্ত্রীর উত্তরে বলা হয়, ডাটা ওয্যারহাউজ না থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেইজে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের পূর্বের তথ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় ২০০৯ সালের ঋণের তথ্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।
ফলে লুৎফুন নেসার প্রশ্নের জবাবে ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ঋণ খেলাপি ও তাদের ঋণের পরিমাণ সংসদকে জানান অর্থমন্ত্রী। এ প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, সেপ্টেম্বর ২০১৫ সালে ঋণ খেলাপির সংখ্যা ছিল এক লাখ ১১ হাজার ৯৫৪ জন এবং তাদের কাছে ঋণের পরিমাণ ছিল ৫৯ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। আর ডিসেম্বর ২০১৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপির সংখ্যা এক লাখ ৭০ হাজার ৩৯০ এবং অর্থের পরিমাণ এক লাখ ২ হাজার ৩১৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
