প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে পরীক্ষার সময় ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, পরীক্ষার সময় ফেসবুক বন্ধের কোন কথা আমরা বলিনি, বন্ধ করার সেই ক্ষমতাও আমাদের নেই। তবে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা কয়েক ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখা যায় কি না, সে ব্যাপারে বিটিআরসির সঙ্গে আলোচনা চলছে।স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের সম্পুরক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও জানান, আগে প্রশ্নপত্র বিজিপ্রেস থেকে ফাঁস হতো। সেখানে নানা ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে এখন সেখান থেকে হয় না। দেড় মাস ধরে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতো দীর্ঘ দিন হাজার হাজার কেন্দ্র পাহারা দিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা বড় কঠিন কাজ।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রশ্নগুলো যখন পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছায় তখন কিছু শিক্ষক আছে তারা সেখানে প্রশ্ন বিলির আগে খুলে ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন। আমরা এই জায়গাটাতে আটকে গেছি। তাই বিটিআরসি’র সঙ্গে আলোচনা করেছি তারা ওই প্রক্রিয়ায় কোনো সহযোগিতা করতে পারে কি না।তিনি বলেন, বিটিআরসিকে বলেছি একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বা কয়েক ঘন্টার জন্য বন্ধ রাখা যায় কি না। বিটিআরসি জানিয়েছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে এসব প্রশ্ন আসে, তাই পরীক্ষার সময়টাতে তারা সেখানে লোক নিয়োগ করে রাখবেন, যাতে পরীক্ষার সময় যদি কিছু হয় তবে তাৎক্ষণিকভাবে জানাবেন সেই অনুসারে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। বিটিআরসি আরও বলেছে বন্ধ না করেও অন্যভাবে তারা সহযোগিতা করবেন। জনগণের ব্যাঘাত সৃষ্টির জন্য আমরা কিছু বলিনি। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী জানান, জঙ্গীবাদ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারী করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক শিক্ষার্থীর অভিভাবকের ঠিকানা ও মোবাইল ফোন নম্বর সংরক্ষণ করবে এবং কোন শিক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণ সন্দেহজনক প্রতীয়মান হলে অভিভাবকের সঙ্গে আলোচনা করবে। এছাড়া সরকারি ও গুরুত্বপূর্ণ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূলের বিষয়ে দিক-নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।তিনি জানান, শিক্ষার্থীদের জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসমূলক কাজে জড়িয়ে পড়া রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যুক্তসঙ্গত কারণ ছাড়া ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সনাক্ত করবে এবং তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনা করার পর অনুপস্থিতির কারণ সন্দেহজনক প্রতীয়মান হলে লিখিতভাবে উক্ত শিক্ষার্থীদের তথ্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করবে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার প্রাপ্ত তথ্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেল প্রশাসককে অবহিত করবেন। এছাড়া সরকার ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এরূপ তথ্য বাংলাদেশ মঞ্জুরী কমিশনকে অবহিত রেখে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রেরণ করবে। তথ্য প্রাপ্তির পর জেলা প্রশাসক পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।শিক্ষামন্ত্রী জানান, জঙ্গী-সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পৃক্ততা মনিটরিংয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঢাক পিস কলেজ, নতুন বাজার, ভাটারা, গুলশান এবং পীসফুল কলেজ, বি-৭৩, দক্ষিণ বনশ্রী, খিলগাঁওয়ের পাঠদানের অনুমতি বাতিলসহ পীস স্কুল, পীস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ঢাকার কার্যক্রম বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া কোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের পৃষ্ঠপোষকতার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে মর্মে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
