একাদশ নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোকে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে দেখছে বিএনপি।আওয়ামী লীগকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে দেখছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা (আওয়ামী লীগ নেতারা) পালানোর জায়গা পাবেন না। এটা তারা নিজেরাই বলেছেন।
রোববার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘গুম, খুন ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে করণীয়’ শীর্ষক ওই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশের নাগরিক অধিকার ফোরাম নামের একটি সংগঠন।খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতারা জনগণকে ভয় পাচ্ছেন। এই জনভীতি আগামীতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের সবচেয়ে বড় বাধা। আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, আগামীতে ক্ষমতায় না যেতে পারলে পালানোর পথ পাবেন না। তারা অন্যায় করেছেন সেই জন্য তারা ভয় পাচ্ছেন। যদি ক্ষমতায় না থাকতে পারেন তাহলে তাদের গুম, খুনের খেসারত দিতে হবে।খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, রংপুরসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে এবারের নির্বাচনকে আমরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। কেননা এসব নির্বাচন একাদশ নির্বাচনের পূর্বে হচ্ছে। তাই এসব নির্বাচনে আমরা দেখতে চাই, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আচরণ, আমরা দেখতে চাই, সরকারের কী আচরণ। এসব নির্বাচন সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের জন্য একটি অগ্নিপরীক্ষা।এরপর আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সরকারের একটা রূপরেখা দেবেন। সেই রূপরেখা নিয়ে আমরা জনগণের কাছে যাব এবং যদি আমরা দেখি এই সরকার আবার ২০১৪ সালের মতো নির্বাচনের দিকে হাঁটছে, আমরা বিশ্বাস করি এবার আর জনগণ তা হতে দেবে না। দেশে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তার দলকেই জনগণ ক্ষমতায় বসাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নিয়ে এতো উৎকণ্ঠা হতো না। শেখ হাসিনা তার নিজের স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। পৃথিবীর কোনও দেশে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করার নজির নেই। তাই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা বলেছেন।দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিজ থেকে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেবে না। তাই এ অধিকার আমাদের আদায় করে নিতে হবে।
গুম নিয়ে সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য দিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি করছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা।তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন দেশে গুম হয়। সেই গুমকে যৌক্তিক করার জন্য তিনি বিভিন্ন দেশে গুম হওয়ার কথা বলেছেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, বিশ্বের কোনো দেশে কোনো উদাহরণ দেখাতে পারবেন না প্রধানমন্ত্রী যে, রাষ্ট্রীয় নির্দেশে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে এভাবে কোনো গুমের ঘটনা ঘটেছে।আমরা নিন্দা জনাই, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি সত্যকে গোপন করে অন্য দেশের উদাহরণ দিয়ে আজকে এদেশের মানুষকে প্রতারণা করার চেষ্টা করছেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে এভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অধিকার আপনার নাই।বিএনপির এ নেতা বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ২০০৯ সালের পর থেকে প্রায় চারশ জনকে গুম এবং এক হাজার পাঁচশ জনকে খুন করা হয়েছে। নরায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা যদি তারা ধামাচাপা দিতে পারতো তহালে আমরা র্যাবের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে পারতাম না।তিনি আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সফাই গাওয়া হচ্ছে পৃথিবীর অন্য দেশেও গুম হয়। কিন্তু না, পৃথিবীর অন্য দেশে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে গুম করা হয় না। সেসব দেশে সন্ত্রাসীরা গুম করে মুক্তিপন দাবি করে। আমাদের দুর্ভাগ্য গুম, খুন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সত্যকে গোপন করে প্রতারণা করছেন। কিন্তু তিনি গুম, খুনের দায় এড়াতে পারবেন না।তনি বলেন, ‘গুম হওয়া ব্যক্তিরা এখনও জীবিত আছেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। তাদের ফিরিয়ে দিন। দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে গুম, খুনের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান মোশাররফ হোসেন।নিখোঁজ লাকসাম পৌর বিএনপির সভাপতি হুমায়ুন কবির পারভেজের স্ত্রী শাহনাজ আকতার রানুর সভাপতিত্বে ও সাবেক ছাত্র নেতা রবিউল হোসেন রবির পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, সিদ্দিকুর রহমান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক আনোয়ারুল আজীম, কেন্দ্রীয় নেতা বদিউজ্জামান আকন্দ, বিএনপি নিখোঁজ কয়েকজন নেতার পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
