পার্বত্য এলাকায় পাহাড় ধসে এখন পর্যন্ত ১৩৮ জন নিহত হয়েছে, আর ধসে পড়া মাটির নিচে এখনো আরো অনেকে চাপা পড়ে আছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, আহত-নিহত অনেককে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এখনো আরো কিছু মৃতদেহ উদ্ধারের আশঙ্কা রয়েছে। এখনো অনেকে চাপা পড়ে আছেন মাটির নিচে। রাঙামাটির ডিসি মঞ্জুরুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, এ পর্যন্ত ৯৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর আসছে যে পৌর এলাকায় অনেকেই নিখোঁজ আছে। উদ্ধার অভিযান আগামীকাল আবার হবে। আশা করি কালকেই আমরা অভিযান শেষ করতে পারবো। এছাড়া যারা উদ্ধার হয়েছেন জন্য আমরা নানান পদক্ষেপ নিয়েছি। সাধারণ মানুষ, ফায়ার সার্ভিস আর দমকল বাহিনী মিলে কাজ করলেই কেবল সেসব উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ স্থানীয়দের। সাধারণ মানুষ ও দমকল বাহিনীরা মিলে এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আটকে পড়াদের উদ্ধারে।
লঘুচাপের প্রভাবে রোববার থেকে সারা দেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয়। সোমবার থেকে চট্টগ্রাম-রাঙামাটি-বান্দরবানে শুরু হয় পাহাড় ধস। এতে ৩ জেলায় মৃতের সংখ্যা সর্বমোট ১৩৮ জনে দাঁড়ায়। এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাঙামাটি। বান্দরবানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আজ বুধবার সকাল থেকেই বান্দরবান-চট্টগ্রাম সড়কে যানবাহন চলাচল চালু হয়েছে। তবে পাহাড় ধসের কারণে আজও বন্ধ আছে রুমা-বান্দরবান সড়ক যোগাযোগ। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট।
প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা সদরের দুর্গত এলাকার প্রায় তিন হাজার মানুষ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ১২টি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নেয়। এ ছাড়া বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় পাঁচ সহস্রাধিক পরিবার। পাহাড় ধসে শিশুসহ মারা গেছে ৬ জন এবং আহত হয়েছে ১১ জন। পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়া ঘরবাড়িসহ ধসে পড়া পাহাড়ের মাটি অপসারণ এবং উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
এদিকে বৃষ্টিপাত থেমে যাওয়ায় প্লাবিত অঞ্চলগুলো থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। সকাল থেকেই বান্দরবান-চট্টগ্রাম, কক্সবাজার সড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। পরিবহন শ্রমিক মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘বান্দরবানের সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। এরইমধ্যে বান্দরবান ছেড়ে গেছে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বেশ কয়েকটি গাড়িও।
এদিকে আশ্রয় কেন্দ্রগুলো থেকে দুর্গতরা ঘরে ফেরা শুরু করেছে। ঘরবাড়ি কাদা মাটি এবং বন্যার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। তবে দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। দুর্গত এলাকায় এখনো পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। ইসলামপুর এলাকার বন্যা দুর্গত মোহাম্মদ সোলায়মান ও মোহাম্মদ মোল্লা জানান, প্লাবিত ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কাদা মাটি আর ময়লা-আর্বজনায় ভরে গেছে। দুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। কিন্তু প্রশাসন ও পৌরসভার পক্ষ থেকে এখনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর পানিও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদেরও আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বসতবাড়িতে ফিরতে দেখা গেছে। জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক জানান, ‘আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। দুর্গত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু করা হবে। সকাল থেকে পাহাড় ধসের স্থানগুলোতে আবারও উদ্ধার তৎপরতা চালু হয়েছে।’
