জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতে,‘কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও? গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি-নেবু? লাউ? বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও- ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক, খাও একা পাও যেথায় যেটুক! বাতাবি নেবু সকলগুলো একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো! তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও? ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও! কবি শিশুদের চাওয়া-পাওয়া, আকুতি-আবদার, চঞ্চলতা-দুরন্তপনা, হাস্য-কৌতুক সহজ সরল ভাষায় চিত্রিত করেছেন ছন্দে ছন্দে। আর এই কাঠবিড়ালি প্রকৃতি থেকে ক্রমেই কমে যাওয়ায় শিশুরা এদের চিনছে ও জানছে বাইয়ের পাতায়। বাস্তবে অনেক শিশুই আর এ নিরীহ প্রাণীর দেখা মিলছে দেখছে না। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত রাজশাহীর তানোরে ক্রমেয় বাসস্থান সংকট, খাদ্যাভাব, কীটনাশক প্রয়োগ ও জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে নিরীহ প্রাণী কাঠবিড়ালির সংখ্যা।
জানা যায়, এ অঞ্চলে এক সময় প্রতিটি গ্রাম-গঞ্জের গাছের ডালা-পালায় নিরীহ নয়নাভিরাম এই প্রাণীটিকে হরহামেশাই দেখা যেতো। ১০-১২ ইঞ্চির এই প্রাণীটির গাছে গাছে ছিল অবাধ বিচরণ। লম্বাটে শরীরের স্তন্যপায়ী প্রাণী কাঠবিড়ালির সামনের ছোট দুই পায়ের দীর্ঘ লেজ ঘন পশমে ঢাকা। প্রখর দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন এই প্রাণীর পায়ের আঙ্গুলে ধারালো নখ দিয়ে লেজ গুটিয়ে মুহূর্তে যে কোন গাছের আগায় উঠে যায়। যেন পাখিদের মত দ্রুততবেগে উড়ে বেড়ায় এই কাঠবিড়ালিরা। সামনের দুপা যেন দুহাতের মত। এই দিয়ে মুখের কাছে তুলে দারুণ ভঙ্গিতে ফল, খেজুরের রস, বীজ এদের প্রিয় খাবারগুলো খায়। খাওয়ার ভঙ্গি মানুষের দৃষ্টিকাড়ে।
প্রাণী গবেষকদের মতে, বাংলাদেশে আট প্রজাতির কাঠবিড়ালি দেখা যায়। এদের মধ্যে পাঁচডোরা কাঠবিড়ালি ও তিনডোরা কাঠবিড়ালি মানুষের সংস্পর্শে তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির আহবায়ক কবি অসিম কুমার সরকার জানান, তানোরে দিন দিন কমে যাচ্ছে নিরীহ প্রাণী কাঠবিড়ালির সংখ্যা। এতকিছুর পরেও এ উপজেলায় ঘন জঙ্গলাকীর্ণ গাছ-গাছালিতে টিকে থাকা এই প্রাণীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে বসবাসের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বেসরকারী রির্সোস সেন্টার বারসিকের বরেন্দ্র অঞ্চল প্রতিনিধি গবেষক শহিদুল ইসলাম এ প্রতিবেদকে জানান, কাঠবিড়ালি পরিবেশের উপকারী প্রাণী। এ প্রাণীর উন্নয়নে সবারই কাজ করা প্রয়োজন। তাই প্রাণ-প্রকৃতির কাঠামো রক্ষার্থে ঐক্যবদ্ধভাবে তাদের রক্ষা করা সবার দায়িত্ব বলেও জানান তিনি।
মিজানুর রহমান, তানোর (রাজশাহী) প্রতিনিধি
