টঙ্গীর ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানা ঃ উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা ॥ নিহত-৩৯, নিখোঁজ-১ ॥

0
0

tampaco-fire-in-tongi

গাজীপুরে টঙ্গী বিসিক শিল্পনগরীতে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডে ধ্বংস প্রাপ্ত ট্যাম্পাকো ফয়েলস কারখানার উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করা হয়েছে। প্রায় একমাস উদ্ধার অভিযান শেষে এ উদ্ধার অভিযান সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। সোমবার ওই কারখানার পাশে স্থাপিত সেনাবাহিনীর কন্ট্রোল রুমে আয়োজিত এক প্রেসব্রিফিংয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম আলম আনুষ্ঠানিক ভাবে এ ঘোষণা দেন।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক এসএম আলম জানান, এক মাস ধরে চলা উদ্ধার অভিযানে ৩৯টি লাশ, কিছু হাড় ও শরীরের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া ৩৬ জনকে আহতাবস্থায় চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। অনেকে চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। নিহত ৩১ জনের পরিচয় সনাক্তের পর তাদেও লাশ স্বজনদেও কাছে হস্তান্ত করা হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় অপর ৮টি লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের পরিচয় সনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এ ঘটনায় যে নয়জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছে তাদের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে রাখা ৮টি লাশ তাদের। ট্যাম্পাকো থেকে যে হাড় ও দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে আমরা ধারণা করছি উদ্ধার করা দেহাবশেষ গুলো ওই নিখোঁজ ব্যক্তিদের।

তিনি বলেন, কারখানার ধ্বংসাবশেষে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থার কর্মীরা তন্নতন্ন করে খোঁজ করেছেন। সেনাবাহিনী ডগ স্কোয়াড দিয়েও খুঁজে দেখা হয়েছে। সেখানে কোন লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি। আর কোন লাশ পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, কারখানার মালিক পক্ষ তাদের কাছে আবেদন করেছে যে এখন থেকে তাদের কারখানায় তারা নিজেরাই উদ্ধার কাজ পরিচালনা করবে। তিনি উদ্ধার কাজে অংশ নেয়া সকল বাহিনী ও সংস্থার কর্মকর্তা, স্বেচ্ছাসেবীদের ধন্যবাদ জানান।

প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের লে. কর্ণেল মোহাম্মদ শফিউল আজম, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ, গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোঃ আক্তারুজ্জামান, শিল্প পুলিশের এএসপি মিজানুর রহমান প্রমুখ।

প্রসঙ্গতঃ টঙ্গীর বিসিক নগরীতে বিএনপির সাবেক সাংসদ মকবুল হোসেনের মালিকানাধীন ট্যাম্পাকো ফয়েলস লিমিটেড কারখানায় গত ১০ সেপ্টেম্বর ভোরে ভয়াবহ বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই কারখানার বিশাল ভবনের অধিকাংশই ধ্বসে পড়ে বিশাল ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। ওই ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত ৩৯ জনের লাশ ও কংকাল উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩১ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এঘটনায় নিখোঁজ রয়েছে ১ জন। নিখোঁজদের সন্ধানে ঘটনার একদিন পর হতে নিখোঁজদের সন্ধানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৪ স্বতন্ত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেডের নেতৃত্বে ‘ফায়ার ফাইটিং এন্ড রেস্কিউ অপারেশন’ এর মাধ্যমে ২৮ দিন ব্যাপী উদ্ধার কাজ চালায়। উদ্ধার কাজে সেনাবাহিনীকে সহায়তা করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, গাজীপুর জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সদস্যরা। উদ্ধার কর্মীরা ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ঘটনাস্থল থেকে বিধ্বস্থ কারখানার মেশিনপত্র, বিভিন্ন অবকাঠামোর রড, ইট, প্লাস্টিক দানা বা বিভিন্ন কাঁচামাল, কাগজের রোল, সেনিটারি ফিটিংস এবং লোহাসহ ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করে নির্ধারিত তিনটি স্থানে স্তুপ করে রাখে। নিহত অজ্ঞাতদের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নিখোঁজদের স্বজনদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে নমূনা সংগ্রহ করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে একাধিক তদন্ত কমিটিও।

এদিকে, কারখানায় বিষ্ফোরণ ও অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারখানার মালিক বিএনপি’র সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হেসেনকে প্রধান আসামী করে টঙ্গী মডেল থানায় এপর্যন্ত দু’টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় মকবুল হোসেনের স্ত্রীকেও আসামী করা হয়েছে। গত ১২ সেপ্টেম্বর কারখানা মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে প্রথম মামলাটি দায়ের করেন নিহত শ্রমিক জুয়েলের পিতা আব্দুল কাদের। পরে ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে টঙ্গী মডেল থানার এস আই অজয় কুমার বাদী হয়ে কারখানা মালিকসহ ১০ জনকে আসামী করে দ্বিতীয় মামলাটি দায়ের করেন। দু’টি মামলা দায়ের হলেও সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here